পিকনিক করতে যাওয়ার মত মুম্বাইয়ের কাছাকাছি 10টি জায়গা

Chandana Banerjee

Last updated: Sep 24, 2019

Want To Go ? 
   

মুম্বাইয়ের শহুরে ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে থাকতে শহর থেকে দূরে শান্ত কোন জায়গায় আপনার উইকএণ্ড কাটাতে ব্যাকুল হয়ে ওঠা খুব স্বাভাবিক। অল্প অ্যাডভেঞ্চারের জন্য শহরের বাইরে বা প্রকৃতির কোলে শান্ত কিছুটা সময় কাটাতে চান, আমাদের দেওয়া এই 10টি পিকনিকের জায়গা আপনাকে হতাশ করবে না।

1. সুলা ভাইনইয়ার্ডস: ওয়াইন এবং ঝলমলে রোদের জন্য

Sula-vineyard-nasik

মুম্বাই থেকে 230 কিলোমিটার দূরে এই জায়গাটিতে আপনি বেশ কায়দায় আরাম করে সময় কাটাতে পারেন এবং নিজেকে সতেজ করে নিতে পারেন। যদি আপনি আঙুর থেকে ওয়াইন তৈরি হয়ে গ্লাসে আসা অবধি পুরো প্রক্রিয়াটির অভিজ্ঞতা চান – যা ভাইনইয়ার্ড এবং ওয়াইনারির টুরেই সম্পন্ন, অথবা এক্সক্লুসিভ ইন-হাউস ভিলা - সুলা বিয়ণ্ডে গিয়ে শুধু থাকতে চান –একদিনের ট্রিপ বা এক সপ্তাহের – দু’ধরনের ট্রিপের জন্যই সুলা ভাইনইয়ার্ড আদর্শ। ক্যাফে রোজ-এ খাওয়াদাওয়া করুন, এটি এঁদের সব দিনের খাবার রেস্টুরেণ্ট; ডুব দিন পুলে, অথবা শহরের রাস্তায় বাইসাইকেল রাইডে যেতে পারেন।

সুলার দিকে যাবার সময় ভিয়েতনাম ড্যামে এক চক্কর দিয়ে যান, এটি ভিয়েতনাম নদীর ওপর মোদক সাগর ড্যাম নামেও পরিচিত। এই ড্যামটি, যেখান থেকে মুম্বাইতে জল সাপ্লাই করা হয়, সেটি নাসিকের ইগতপুরী জেলায় অবস্থিত, এবং এটি উপহ্রদ এবং ছবির মত দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।

2. কোলাদ: ওয়াটার স্পোর্টস রাশের জন্য

kolad-mumbai

মহারাষ্ট্রের অ্যাডভেঞ্চারের কেন্দ্র, রাইগাদ জেলার দোলাদ এখানকার কুণ্ডলিকা নদীতে হোয়াইট ওয়াটার রাফটিং এবং ট্রেকিং-এর রাস্তার জন্য বিখ্যাত। মুম্বাই থেকে 121 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কোলাদ অ্যাডভেঞ্চার ক্রিয়াকলাপে সবসময় জমজমাট। রাফটিং ছাড়াও এখানে ক্যানোয়িং, কায়াকিং, প্যারাগ্লাইডিং, রাপেলিং, রক ক্লাইম্বিং, এবং রিভার জিপ লাইন ক্রসিং-ও হয়। ওয়াটারফল রাপেলিং এবং মাউণ্টেন বাইকিং অ্যাডভেঞ্চার প্রেমিকদের মধুর দিকে মৌমাছির মত টেনে আনে।

3. ম্যাথেরান: একটু সেকেলে পাহাড়ী প্রশান্তির জন্য

matheran-mumbai

মুম্বাই থেকে 90 কিলোমিটার দূরে এই শান্তিপূর্ণ হিল স্টেশনটি ওয়েস্টার্ন ঘাট পর্বতমালায়, সমুদ্রতল থেকে 800 মিটার উপরে অবস্থিত। এই ইকো-সেন্সিটিভ অঞ্চলটি পৃথিবীর সেই সমস্ত গুটিকয়ের জায়গার মধ্যে একটি, যেখানে অটোমোবাইল অনুমোদিত নয়, যার ফলে এই প্রশান্তি বজায় থাকে। এখানে থাকাকালীন আপনি হেঁটে বেড়াতে পারেন জংলী রাস্তায়, ঘোড়ার পিঠে চড়ে শহর ঘুরে বেড়াতে পারেন, লওসিয়া এবং হানিমুন পয়েণ্টের মধ্যে জিপ-লাইনিং করে দেখুন, হিল স্টেশনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন পয়েণ্ট ঘুরে দেখুন, এবং ক্যারলট লেকের পাশে পিকনিক হ্যাম্পারে পৌঁছে যান।

4. কারনালা: এক খণ্ড প্রকৃতি এবং একটু ইতিহাসের ছোঁয়ার জন্য

karnala

কারনালাতে পিকনিক করতে আসা লোকজন তাদের ভ্রমণ-বৃত্তান্তে পাখি দেখা, নেচার ট্রেক এবং কারনালা ফোর্টে ভ্রমণও অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারেন। পানভেল থেকে 12 কিলোমিটার দূরে এই কারনালা পাখি-আশ্রয়ালয় প্রায় 12.11 স্কোয়ার কিলোমিটার জায়গা জুড়ে অবস্থিত, এক রত্ন-খণ্ড, যেখানে 150টি স্থানীয় এবং 37টি প্রবাসী পাখি প্রজাতির সমাবেশ। দেবগিরি যাদবদের তৈরি কারনালা ফোর্ট, যেটি পরে তুঘলকীরা অধিকার করে নেয়, সেটি এখানকার অন্যতম দেখার জায়গা। ট্রেক করে এখানে পৌঁছাতে এক ঘণ্টা সময় লাগবে, ফোর্টে পৌঁছে গেলে এখান থেকে আপনি মুম্বাই বন্দরের অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পাবেন।

5. লোনাবলা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য

lonavala

মুম্বাই থেকে 96 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হিল স্টেশনটি এখানকার চিক্কি এবং শ্বাসরোধকারী দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। মুম্বাই বেড়াতে আসা লোকজনের জন্য লোনাবলা সহজে পৌঁছে যাওয়ার মত একটি পিকনিক স্পট, এবং এখানে অনেক পয়েণ্ট রয়েছে যেগুলি পিকনিক করতে আসা লোকজনদের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং আশেপাশের উপত্যকার সুন্দর দৃশ্য উপহার দেয়। রাজমাচি পয়েণ্ট বেশ জনপ্রিয় কারণ এখান থেকে শিবাজীর ফোর্ট – রাজমাচি বেশ ভালভাবে দেখা যায়। টাইগার’স পয়েণ্ট বা টাইগার’স লীপেও পর্যটকরা প্রায়ই যান। 650 মিটারেরও বেশি খাড়া ঢাল এবং একটি বৃষ্টির জলের ঝরনাযুক্ত এই জায়গাটিতে প্রকৃতিপ্রেমীদের একবার অবশ্যই যাওয়া উচিত্‍।

6. মাণ্ডবা: এক দিন বীচ, গণ্ডেপিণ্ডে উদরপূর্তি এবং ওয়াটার অ্যাডভেঞ্চারে জন্য

madwa

মুম্বাইয়ের গেটওয়ে অফ ইণ্ডিয়া থেকে বোটে 102 কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের ধারে অবস্থিত এই গ্রামটি রৌদ্রোজ্জল বীচ, সুস্বাদু খাওয়াদাওয়া, এবং ওয়াটার স্পোর্টসের জন্য বিখ্যাত। আপনি এখানে একদিনের জন্যই থাকুন বা পুরো উইকএণ্ড কাটাতেই আসুন না কেন, পুরোনো RCF জেটির কাছে এই পিচ্ছিল গ্রামটি ঘুরে, মাণ্ডবা বীচের হেঁটে এবং স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটাতে পারবেন।

7. এলিফ্যাণ্টা আইল্যাণ্ড: ওপরে চড়ার মজা এবং ইতিহাসে ভরা একটি দিনের জন্য

elephanta island

এলিফ্যাণ্টা আইল্যাণ্ড (গেটওয়ে অফ ইণ্ডিয়া থেকে) জলপথে এক ঘণ্টা দূরে; অর্থাৎ মুম্বাই থেকে 10 কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত; এখানে অজন্তা ইলোরার মত হাতে খোদাই করা দেওয়াল-চিত্র আঁকা প্রাচীন গুহা রয়েছে। এগুলি ঘুরে দেখার পর, আপনি ক্যানন পাহাড়ে চড়ার কথা ভাবতে পারেন, যেটির একদম চূড়ায় পুরনো কামান বসানো আছে। এত কিছু ঘোরার পর আপনি ক্ষুধার্ত হয়ে পড়বেন এবং আপনার পিকনিক বাকেটের সুস্বাদু খাবারের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠবেন, সুতরাং কাছাকাছি পিকনিক স্পট খুঁজে নিন এবং খেতে বসার আগে দেখে নিন জায়গাটিতে যেন স্থানীয় বাঁদরদের দৌরাত্ম্য না থাকে।

8. ইয়ুর হিলস: ঝরনার তলায় মজায় ভরপুর একটি দিনের জন্য

yeoor hills

সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশনাল পার্কের পূর্বভাগে অবস্থিত ইয়ুর হিলসে ছটি ছোট ছোট গ্রামে এখানকার ট্রাইবালরা থাকেন। জলপ্রপাত এবং ঘন জঙ্গলে ঘেরা অঞ্চল এবং ছবির মত সুন্দর যেন একটি মণি, এটি প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে স্বর্গের মত, এবং পাহাড়ী জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে সারা দিন কাটাতে বেশ ভালই লাগবে। পাখি দেখতে উৎসুক লোকজন এবং স্কুলপড়ুয়ারা প্রায়ই এখানে বেড়াতে আসে; এই ইয়ুর হিলসে আপনি কিছু রিসোর্টও পাবেন যেখানে আপনি সারাটা দিন কাটাতে পারবেন এবং ঠোঁটে লেগে থাকার মত সুস্বাদু খাবার খেতে পারবেন। এটি মুম্বাই থেকে 25 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং মুম্বাই বেড়াতে আসা পর্যটকরা সহজেই পৌঁছতে পারবেন।

9. আম্বি ভ্যালি: বন্ধুদের দঙ্গলের সঙ্গে বিলাসবহুল, স্মরণীয় ভ্রমণের জন্য

aamby-valley

যারা প্রচুর পরিমাণে এক্টিভিটি এবং এক্সাইটমেণ্টে ভরা দিন ভালবাসেন এবং বিলাসবহুল মজার ভ্রমণের জন্য বাজেট বাড়াতে চান, তাদের যাওয়ার মত জায়গা হল আম্বি ভ্যালি। 10,000 একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই রিসোর্টটি বিলাসবহুল এবং এখানে ইনডোর এবং আউটডোরে করার মত অনেক জিনিস আছে। লোনাবলা থেকে মাত্র 30 কিলোমিটার এবং মুম্বাই থেকে 105 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আম্বি ভ্যালিতে 7 স্টার রেস্টুরেণ্ট, 18টি হোল-যুক্ত গল্ফ কোর্স, একটি ফ্যান্সি ওয়াটার পার্ক, শুধুমাত্র বাচ্চাদের জন্য একটি বিভাগও আছে, যার ফলে এটি ব্যস্ত সপ্তাহের শেষে মুম্বাইবাসীর আরাম করার জন্য সপরিবারে পিকনিক করার একটি আদর্শ জায়গা হয়ে ওঠে।

10. পঞ্চগনি: সাধারণ ভিউপয়েণ্ট থেকে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার জন্য

panchgani

অবসরোত্তর বসবাসের জন্য এককালে বিখ্যাত পঞ্চগনি বর্তমানে পুনে এবং মুম্বাই থেকে পিকনিক করতে আসা লোকজনদের হটস্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহ্যাদ্রি পর্বতমালার পাঁচটি পাহাড় এবং গ্রামের মাঝে অবস্থিত এই জায়গাটি মুম্বাই থেকে 285 কিলোমিটার এবং এটি এর স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার জন্য বিখ্যাত। এখানে থাকলে সিডনি পয়েণ্টে অবশ্যই যান, যেখান থেকে দেখতে পাবেন ধোম ড্যাম; ডেভিল’স কিচেন, পুরাণ অনুযায়ী পাণ্ডবরা যেখানে কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন; এবং পার্সী পয়েণ্ট যেখান থেকে কৃষ্ণা ভ্যালির অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পাবেন। পঞ্চগনির ব্যাপারে আরও একটি জানার বিষয় হল, যে ভলক্যানিক জ্বালামুখিটি এই পাঁচটি পাহাড়কে ঘিরে রয়েছে সেটি এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম এবং তিব্বতী জ্বালামুখীর পরেই এর স্থান।

সুতরাং মুম্বাইবাসী, পরের বার পিকনিকের পোকা নড়ে উঠলে এবং এক দিনের জন্য বা উইকএণ্ডের জন্য কোন আকর্ষণীয় জায়গায় যেতে হলে আমাদের দেওয়া এই তালিকা থেকে কোন একটি জায়গা বেছে নিন, এবং বাঁধনহীন মজা করার জন্য তৈরি হো’ন।

Book Your Flight to Mumbai Now!